বাংলাভয়েস.নিউজ
ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের অনেক জায়গায় করোনা ভাইরাসের বিস্তারকে কেন্দ্র করে একদল মানুষ ইসলামবিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন৷
মার্চে ভারতের দিল্লির নিজামুদ্দিন এলাকায় তাবলিগ জামাতের সমাবেশ হয়৷ সেখানে অংশ নেন দুই হাজারেরও বেশি মানুষ, যাদের মধ্যে বিদেশিও ছিলেন অনেকে৷ এই সমাবেশে অংশ নেয়া অনেকের মাঝেই নতুন করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়৷
বিশেষ করে তাবলিগ জামাতের লোকেরা করোনার বিধিনিষেধ মানতে না চাওয়ায় এবং এর ফলে এদের সদস্যদের মাঝে এই ভাইরাস বিস্তার করায় এই প্রচারণা জোরদার হয়েছে৷
তাবলিগ জামাত নামের ইসলামিক গোষ্ঠীটির জন্ম ভারতে এবং তারা বাংলাদেশসহ উপমহাদেশ ও এর বাইরে অনেক আগেই বিস্তার লাভ করেছে৷ মার্চে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে তাদের বিরাট জমায়েত হয়৷ সেখান থেকে কমপক্ষে ২০ হাজার সদস্যকে এখন কোয়ারান্টিনে রাখা হয়েছে৷ এদের কমপক্ষে ছয়শ’ জনের মধ্যে ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে৷
বাংলাদেশেও সম্প্রতি এদের মধ্যে বিদেশি ৩২১ জনকে যাত্রাবাড়ি ও কাকরাইলের দু’টি মসজিদে রাখা হয়েছে৷ এছাড়া বাংলাদেশের তাবলিগ জামাত সবাইকে করোনা মোকাবেলায় সরকারের নির্দেশনা পালনের আহ্বান জানিয়েছে৷
এরমধ্যে ব্রিটেনে করোনাভাইরাস বিস্তারের পেছনে নিজেদের দায় স্বীকার করে নিয়েছে হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন ইসকন। মার্চের শুরুতে ব্রিটেনে সংগঠনটির একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী পাঁচজন ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। এ ছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। যদিও অন্যগুলোকে থোড়াই কেয়ার করে শুধু ইসলামফোবিয়ার উপর জোর দিচ্ছে কিছু স্বার্থন্বেষী মানুষ।
ইসকন ইউকে শাখার শীর্ষ কর্মকর্তা প্রাঘোসা দাসকে উদ্ধৃত করে সংগঠনটির প্রকাশনা ইসকন নিউজে বলা হয়েছে, মার্চের ১২ তারিখে লন্ডনের উপকণ্ঠে ইসকনের এক মন্দিরে তাদের একজন গুরুর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে প্রায় হাজারখানেক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। দু’দিন পর ১৫ মার্চ লন্ডনের কেন্দ্রে তাদের আরেকটি মন্দিরে শ্রুতিধর্ম প্রভু নামে প্রয়াত ঐ গুরুর স্মরণসভাতেও কয়েকশ’ মানুষ অংশ নিয়েছিলেন।
ইসকন স্বীকার করেছে এখন পর্যন্ত তাদের যে ২১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং যে পাঁচজন মারা গেছেন- তারা সবাই ওই দুটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আক্রান্তদের মধ্যে ২০ এবং ৩০ বছর বয়সীসহ বিভিন্ন বয়সী সদস্য রয়েছেন।
তবে ভারতের নিজামুদ্দিনের সমাবেশের পর থেকে বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুসলিমবিদ্বেষী প্রচারণা আবার শুরু হয়৷ এর আগে ভারতের নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিরোধের মুখে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়াতে শুরু করে৷ বিরোধ মাঠে গড়ায়৷ প্রাণহানি হয়৷
হ্যাশট্যাগ করোনা জিহাদ
টুইটারে সম্প্রতি কয়েকটি হ্যাশট্যাগ দিয়ে প্রচুর পোস্ট হচ্ছে৷ এর মধ্যে #CoronaJihad, #BioJihad কিংবা #MuslimMeaningTerrorist এসব সম্বলিত পোস্ট দেখা যাচ্ছে৷ কিছু মানুষ করোনা ভাইরাসকে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়াবার উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছেন৷
মার্কিন সংবাদ সংস্থা সিএনএন যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন অ্যানালিস্ট প্লাটফর্ম ইকুয়ালিটি ল্যাবের বরাত দিয়ে বলছে, ২৮ মার্চ থেকে প্রথম সপ্তাহেই #CoronaJihad হ্যাশট্যাগটি টুইটারে কমপক্ষে তিন লাখ বার প্রকাশিত হয়েছে এবং কমপক্ষে সাড়ে ১৬ কোটি মানুষ তা দেখেছেন৷
ফেসবুক ও টুইটারে বিদ্বেষমূলক এসব বক্তব্য যারা ছড়াচ্ছেন তাদের একটি অংশ আবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর দল বিজেপির সমর্থক বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে৷ ওয়াশিংটন পোস্টে মন্তব্য প্রতিবেদনে রানা মুসলিম বিদ্বেষ ছড়ানোর পেছনে রাজনৈতিক ব্যর্থতাকে দায়ী করে লেখেন, ‘‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, এমন একটা বৈশ্বিক সংকটের সময় যখন আমাদের সব হিংসা দূরে রাখা দরকার, তখন আমার দেশ ও আমার নেতারা আমাকে আবারো বাধ্য করছেন মানুষের নৈতিকতাবিবর্জিত অন্ধসংস্কার নিয়ে লিখতে৷”
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় প্রবাসীদের দু’টি সংগঠন ইন্ডিয়ান অ্যামেরিকান মুসলিম কাউন্সিল (আইএএমসি) ও হিন্দুস ফর হিউম্যান রাইটস (এইচএফএইচআর)গেল শনিবার একটি যৌথবিবৃতি দিয়েছে৷ তারা মুসলিম সংখ্যালঘুদের করোনা সংকটে বলির পাঠা বানানোর নিন্দা জানিয়েছে, বিশেষ করে তাবলিগ জামাতের সমাবেশকে কেন্দ্র করে৷
ইংল্যান্ড ও অ্যামেরিকাতেও
শুধু ভারতে নয়, ইসলামবিদ্বেষী প্রচারণা যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রেও দেখা গেছে৷ গেল কয়েকসপ্তাহ ধরে যুক্তরাজ্যে ভুল তথ্য ও প্রচারণা চালাচ্ছে দক্ষিণপন্থিরা৷
হাফিংটন পোস্ট প্রতিবেদন করেছে, সামাজিক গণমাধ্যমে মসজিদ ও বাইরের পুরোনো ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে বলা হচ্ছে, মুসলিমরা এখনো জমায়েত হচ্ছে৷ অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে ছড়ানো এসব ছবির সত্যতা পায়নি পুলিশ ও বিভিন্ন ফ্যাক্ট চেকিং গ্রুপ৷
এর মধ্যে একটি প্রচারণা ছিল, ‘যুক্তরাজ্যে করোনা ভাইরাসের কেসগুলোর ২৫ ভাগ মুসলিমদের কারণে হয়েছে৷’ কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তারা ‘নিজেদের আলাদা করতে চাননি৷’ ফ্যাক্ট চেকিং প্লাটফর্ম ফার্স্ট ড্রাফট নিউজ এই পরিসংখ্যানের সত্যতা পায়নি৷
তারা সতর্ক করে বলছে, মানুষ এখন ভয়ে আছে৷ এই ভয়কে ব্যবহার করে ঘৃণা বা বিদ্বেষ ছড়ানোর পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে৷ সূত্র- ডয়েচে ভেলে
আরো পড়ুন- করোনার দুর্যোগে আপনার প্রয়োজনীয় জরুরি ফোন নাম্বারসমূহ
বি.ভ/এন.এম