বাংলাভয়েস.নিউজ
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর ওষুধ রেমডেসিভির উৎপাদন সম্পন্ন করেছে দেশের খ্যাতনামা ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। তারা বলেছে, উৎপাদনের সব প্রক্রিয়া শেষ করার পর শুক্রবার (৮ মে) সকাল থেকেই ওষুধটি বাজারজাত করার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
এসকেএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিমিন হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমরা দেশবাসীকে জানাতে চাই যে বিশ্বে করোনার একমাত্র কার্যকর ওষুধ বলে স্বীকৃত জেনেরিক রেমডেসিভির উৎপাদনের সব ধাপ আমরা সম্পন্ন করেছি।
ওষুধ প্রশাসন গত মার্চ মাসে এটি ব্যবহারের অনুমতি দেয়। ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদনের পরপরই আমাদের ফর্মুলেশন বিজ্ঞানীরা মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে রেমডেসিভির নিয়ে কাজ শুরু করেন। যেহেতু এটি একটি শিরায় দেয়া ইনজেকশন, সে কারণে এর উৎপাদনে সূক্ষ্ম প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। দুই মাস ধরে এসকেএফ কর্মীদের নিরলস পরিশ্রমের ফলেই এত কম সময়ে এটা উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। ওষুধের মূল উপাদান সরবরাহকারীদের সঙ্গে চুক্তি করে পর্যাপ্ত কাঁচামাল প্রাপ্যতা নিশ্চিত করেছি আমরা— বলেন সিমিন হোসেন।
করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্রের গিলিয়েড সায়েন্সেস কোম্পানির তৈরি রেমডেসিভির সারাবিশ্বে সাড়া ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) গত সপ্তাহে করোনার ওষুধ হিসেবে এটিকে ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। জাপানের ওষুধ প্রশাসন ৭ মে থেকে ওষুধটি করোনা রোগীদের ওপর প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে। তবে কবে নাগাদ জাপান এর উৎপাদনে যাবে তা এখনো ঠিক হয়নি। গিলিয়েড সায়েন্সেস ওষুধটি উৎপাদনের জন্য ভারত ও পাকিস্তানের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলে জানা গেছে।
এ অবস্থায় এসকেএফই বিশ্বে প্রথম ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, যারা জেনেরিক (মূল/গোত্র) রেমডেসিভির উৎপাদন করতে সক্ষম হলো। এসকেএফের উৎপাদন করা রেমডেসিভিরের বাণিজ্যিক নাম ‘রেমিভির’।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হলেও রোগীদের চিকিৎসায় এই রেমডেসিভির সবচেয়ে বেশি কার্যকারিতা দেখিয়ে চলেছে। গিলিয়েড সায়েন্সেস বলছে, এই ওষুধ ব্যবহারে রোগীদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। মানুষের শিরায় ইনজেকশন হিসেবে এই ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। রোগের তীব্রতার ওপর এর ডোজ নির্ভর করে। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য ৫ অথবা ১০ দিনের ডোজ প্রয়োজন হতে পারে।
রেমডেসিভির উৎপাদনের একচেটিয়া স্বত্ব রয়েছে গিলিয়েডের। তবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইন অনুযায়ী, জাতিসংঘ স্বীকৃত বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলো এসব পেটেন্ট বা স্বত্ব অগ্রাহ্য করতে পারে। ফলে এসব দেশ সহনীয় মূল্যে ওষুধ উৎপাদন করতে পারে। তবে এই ওষুধটি বর্তমানে খোলাবাজারে দেওয়া হবে না। এটা দেওয়া হবে করোনা চিকিৎসার জন্য সরকার অনুমোদিত হাসপাতাল বা ক্লিনিককে।
ফ্লোরিডার মেমোরিয়াল হেলথ কেয়ার সিস্টেমের প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক ডা. আবদুর রহমান বেগ বলেছেন, রেমডেসিভির একটি ভাইরাসপ্রতিরোধী ওষুধ। এই ওষুধ প্রয়োগে ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি রোধ করা যায়। ২০১৬ সালে ইবোলা এবং ২০১৭ সালে সার্স কোভিড টু ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সাফল্যের পর করোনা প্রতিরোধেও সফলতা মিলছে ।
যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) গত ২৯ এপ্রিল করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় রেমডেসিভির ওষুধটি পরীক্ষামূলক জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এর আগে অবশ্য ফ্লোরিডার হলিউড মেমোরিয়াল হেলথ কেয়ার সিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত পাঁচটি হাসপাতালের একটি মেমোরিয়াল রিজওনাল হসপিটালের ডাক্তাররা রেমডেসিভির দিয়ে কোভিড-১৯ আক্রান্ত এক রোগীর চিকিৎসায় সফলতা পেয়েছেন।
আবদুর রহমান স্পষ্ট করেছেন যে করোনা আক্রান্ত হলেই এই ওষুধ দেওয়া যাবে না। এটা প্রযোজ্য মুমূর্ষু রোগীর ক্ষেত্রে। অর্থাৎ ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৪ শতাংশের নিচে নেমে গেলে, অক্সিজেন দিতে হয়, কিংবা একমো বা ভেন্টিলেশন-নির্ভর হলে, সেই রোগীকেই এই ওষুধ দেওয়া যাবে।
রেমডেসিভির চিকিৎসকদের আশাবাদী করে তুলছে। সামনে আরও কার্যকর কিছু আসবে কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে এর আগ পর্যন্ত এবং অবশ্যই প্রতিষেধক আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত আবদুর রহমান আশা করছেন রেমডেসিভির হয়ে উঠতে পারে করোনা চিকিৎসায় কার্যকর ব্যবস্থা।
বি.ভ/এন.এম