বাংলাভয়েস.নিউজ
পর্যটন ডেস্ক :: চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রির অপর নাম চিটাগাং কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রি। এই সিমেট্রি পরিচালনা করে মূলত কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ১৪তম পদাতিক বাহিনী চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ গ্রহন করত এবং এখানে যুদ্ধে আহত সেনাদের চিকিৎসার জন্য ১৫২ তম জেনারেল হাসপাতাল চালু করেছিল। এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অথবা যুদ্ধক্ষেত্রে মারা যাওয়া মোট ৪০০ জন যোদ্ধাকে কবর হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর দেশের আরও অনেক অস্থায়ী সিমেট্রি থেকে লাশ এনে চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রিতে সমাধিস্থ করা হয়।
চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি -তে মোট ৭৫৫টি কবর রয়েছে। ৭৫৫টি কবরের মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মোট ৭৩১ জন সেনার কবর রয়েছে। কমনওয়েলথের বাইরে একজন নেদারল্যান্ডের নৌবাহিনীর সদস্যর কবর রয়েছে এবং ১৯ জন জাপানি সেনার কবরও রয়েছে।
কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামের মাটিতে সমাহিত ব্রিটিশ সেনার সমাধি রয়েছে ৩৭৮টি, কানাডা ২৫টি, অস্ট্রেলিয়া ৯টি, অবিভক্ত ভারত ২১৪টি, পূর্ব আফ্রিকা ১১টি, পশ্চিম আফ্রিকা ৯০টি ও বার্মার ২টি। এছাড়া চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রিতে মোট ১৭টি কবরের মানুষদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি যারা আজও অজানা হয়ে এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়ে আছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কতটা ভয়ংকর, রক্তাক্ত ছিল তা ওয়ার সেমিট্রিতে শায়িত সেনাসদস্যর সমাধি দেখলে বোঝা যায়। এই সিমেট্রি বানানোর উদ্দেশ্য ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে সকল সেনা মারা গেছে তাদের সম্মান জানানো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তি জাপান অবিভক্ত ভারতে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। যুদ্ধকালীন সময়ে ১৯৯৪ সালের মে মাসে জাপানিরা তাদের প্রধান আক্রমন ঠিক করে চিন্তা করেছিল আসামে অনুপ্রবেশ করে লেডো সড়ক ও চীনে রসদ সরবরাহ বন্ধে বিমান ক্ষেত্রগুলো বিধ্বস্ত করবে। যদিও তাদের সে আশায় গুড়েবালি। তিন মাস রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জাপানি বাহিনী পিছু হটে। বিধ্বস্ত জাপানি সৈনিকরা পশ্চাদ্ধাবন করে ১৯৪৫ সালের ১লা মে পেগুতে উপনীত হয়।
জাপানি সৈনিকদের মধ্যে যারা যুদ্ধে বেঁচে গিয়েছিল, তারা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে সিত্তাং ও ইরাবতী উপত্যকা ধরে পূর্ব দিকে পলায়নের চেষ্টা করে। যদিও মিত্রবাহিনী তাদের বন্দী করার সুযোগ ছিল কিন্তু ১৯৪৫ সালে আনুষ্ঠানিক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তিতে প্রকৃতপক্ষে সকল সামরিক তৎপরতা সমাপ্ত হয়।

সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়া যোদ্ধাদের নাম সম্বলিত পুস্তক
চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রির প্রবেশ পথে চট্টগ্রাম স্মৃতিপীঠ নামে একটি বেদি আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কালে রাজকীয় ভারতীয় নৌবাহিনী ও বানিজ্য বহর বঙ্গোপসাগরে ডুবে ৬,৪৬৯ জন নাবিকের সলিল সমাধি হয়। এই নাবিকদের কোন সমাধি নেই তাই তাদের নাম বেদির উপরে রাখা পুস্তকে লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
প্রায় ৪ একর জমিতে অবস্থিত চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি। দেশের মায়া কাটিয়ে বিদেশ বিভূঁইয়ে যুদ্ধ করে বিজয়ীর বেশে দেশে ফেলে আসা মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-পুত্র আর আত্মীয় স্বজনদের কাছে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা পূরণ না হওয়া হতভাগা যোদ্ধারা পরিবার-পরিজনের অজ্ঞাতসারেই হাজার হাজার ক্রোশ দূরে সমাহিত হয়েছেন।
যেভাবে যাবেন :
চট্টগ্রাম শহরে জিইসি (জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানি) মোড় থেকে সোজা পূর্ব দিকে (প্রবর্তক মোড় বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে) কিছুদূর গিয়ে বামে মেরী’স স্টোপস ক্লিনিক রেখে ডানে (দক্ষিণ) যে রাস্তাটা গেছে সেটাই বাদশা মিয়া চৌধুরী সড়ক। চট্টগ্রাম চারুকলার বিপরীত পাশে অবস্থিত ওয়ার সিমেট্রির অবস্থান ১৯ বাদশা মিয়া চৌধুরী সড়ক, মেহেদীবাগ।
বি.ভ/এফ.বি