বাংলাভয়েস.নিউজ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: অযোধ্যার ভেঙে-ফেলা বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির তৈরির পক্ষে গত শনিবার রায় ঘোষণার পর থেকেই কাশী-মথুরা-আগ্রাতে ছাপ পড়েছে কালো মেঘের ঘনঘটা
রায় ঘোষনার পর কাশী-মথুরার মসজিদ সরিয়ে ফেলে পার্শ্ববর্তী মন্দিরকে যাতে পুরো জায়গাটা দিয়ে দেওয়া হয়, সেই লক্ষ্যে ভারতের উগ্র হিন্দু সংগঠনগুলোর আন্দোলন অনেক পুরনো, যা আবার সামনে এসেছে।
এমন কী বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম তাজমহলও তৈরি হয়েছে প্রাচীন এক শিবমন্দিরের ওপর – এমনকি এ রকম একটি দাবিও আজকাল জোরেশোরে উঠছে।
ভারতে এমন বহু তীর্থস্থান আছে, যেখানে মন্দির আর মসজিদ শত শত বছর ধরে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে – কখনও বা তারা একই দেয়াল পর্যন্ত শেয়ার করে।
উত্তর প্রদেশে কাশী বা মথুরা, কিংবা মধ্যপ্রদেশে ভোজশালার মতো এমন বহু শহরের জন্যই কিন্তু অযোধ্যার রায় এক ধরনের অশনি সংকেত – যা সেই সহাবস্থানের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে।
এখন রব উঠেছে মথুরাতেও শাহী ঈদগাহ মসজিদ আর শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দির কমপ্লেক্স ঠিক পাশাপাশি, প্রাচীন মন্দির ভেঙে এখানেও মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব মসজিদ গড়েছিলেন বলে দাবি করা হয়।
বাবরি মসজিদ ভাঙার পর এই হিন্দুত্ববাদীদেরই স্লোগান ছিল ‘ইয়ে তো সির্ফ ঝাঁকি হ্যায় – কাশী মথুরা বাকি হ্যায়’।
অর্থাৎ কিনা, “বাবরিতে তো শুধু একটা ধাক্কা দিয়েছি, এরপর ধরব কাশী-মথুরাকে – ওগুলো মেটানো বাকি আছে।”
বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর দুম করে এলাহাবাদ শহরের নাম বদলে দিল, কিংবা মুঘলসরাই স্টেশনের নাম রাখল বিজেপি-জনসঙ্ঘের তাত্ত্বিক নেতার নামে এ ধরনের ঘটনা সাম্প্রদায়িকতার এক অশনী সংকেত।
সুতারাং কাশীর জ্ঞানবাপী মসজিদ, মথুরার শাহী ঈদগাহ মসজিদ বর্তমান আকারেই চিরকাল অক্ষত থাকবে, তা খুব জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না।
এমন কী পৃথিবীর সেরা স্থাপত্যগুলোর মধ্যে অগ্রগণ্য তাজমহলও তার পরিচয় নিয়ে পুরোপুরি নিরাপদ থাকতে পারছে না।
ভারতের নামী ইতিহাসবিদ মৃদুলা মুখার্জি বলেন, আন্তর্জাতিক মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় তাজমহলে হয়তো তারা এখনই হাত দেবে না।
তবে এলাহাবাদ বা মুঘলসরাইয়ের নাম বদলের মতো ছোট ছোট পদক্ষেপে তাদের ‘দৈনন্দিন সাম্প্রদায়িকতা’ কিন্তু থেমে নেই।
মুখার্জি আরো বলেন, “আসলে এই যে ‘হিন্দুত্ব প্রোজেক্ট’ বা হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন, সেটা তো সঙ্ঘের ঘোষিত এজেন্ডার মধ্যেই পড়ে। তারা তো খোলাখুলিই বলে যে তারা হিন্দুরাষ্ট্র তৈরি করতে চায়।”
“আর সেই এজেন্ডা বাস্তবায়নের মধ্যে যে গভীর একটা অ্যান্টি-মুসলিম বায়াস বা প্রবল মুসলিম-বিদ্বেষ আছে সেটা তো অস্বীকার করা যায় না”, বলছিলেন অধ্যাপক মুখার্জি।
ফলে বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের সেই মূল লক্ষ্যর বাস্তবায়ন পর্যায়ক্রমে চলছেই। সূত্র-বিবিসি
এন.এম.এন/বি.ভ